1. সাহিত্য

কবি জীবনানন্দ দাশের ৬৮ তম প্রয়াণ দিবস আজ


সাহিত্য রস


আজ (২২ অক্টোবর ২০২২) কবি জীবনানন্দ দাশের প্রয়াণ দিবস। ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবরে কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দূর্ঘটনার তিনি আহত হন। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তার শরীর দলিত হয়ে গিয়েছিল। ভেঙ্গে গিয়েছিল কণ্ঠা, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়।

 যে স্থানে কবির সেই ট্রাম দূর্ঘটনা ঘটেছিলো।


গুরুতরভাবে আহত জীবনানন্দের চিৎকার শুনে ছুটে এসে নিকটস্থ চায়ের দোকানের মালিক চূণীলাল এবং অন্যান্যরা তাকে উদ্ধার করে। তাঁকে ভর্তি করা হয় শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। এ সময় ডাঃ ভূমেন্দ্র গুহ-সহ অনেক তরুণ কবি জীবনানন্দের সুচিকিৎসার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। কবি-সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর অনুরোধেই পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় কবিকে দেখতে এসেছিলেন এবং আহত কবির সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছিলেন যদিও এতে চিকিৎসার তেমন উন্নতি কিছু হয়নি। তবে কবি জীবনানন্দের অবস্থা ক্রমশ জটিল হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন কবি। চিকিৎসক ও সেবিকাদের সকল প্রচেষ্টা বিফলে দিয়ে ২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে রাত্রি ১১টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ মৃত্যুবরণ করেন।

 অন্তিম শয়ানে কবি জীবনানন্দ দাশ।


‘শরীর রয়েছে, তবু মরে গেছে আমাদের মন/
হেমন্ত আসেনি মাঠে/ হলুদ পাতায় ভরে গেছে হৃদয়ের বন’
কবিতায় এমন ভাষা, রূপ-রস-গন্ধ জীবনান্দ ছাড়া আর কে বিলোতে পারেন?

জন্ম ১৮৯৯ সালে বরিশালে। ১৯২১ সালে কোলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ। পরে যুক্ত হন শিক্ষকতায়। ভারত ভাগের কিছুদিন আগে স্থায়ী হন কোলকাতায়।

জীবনানন্দ দাশ বাংলা কবিতাকে ঋদ্ধ করেছেন পরম যত্নে। তাঁর কবিতা জুড়ে বাংলার প্রকৃতি, নারী, প্রেম আর একাকিত্ব এসেছে ঘুরেফিরে। কবিতার বালিশে মাথা রেখে শুনেছেন বিপন্ন মানুষের দীর্ঘশ্বাস। যেখানে প্রেম পরিগণিত হয়েছে নিরাক দুপুর কিংবা মৃতপ্রায় হলুদ ঘাসের মতো।

জীবনানন্দ দাশ তাঁর সাহিত্যে ফুটিয়ে তুলেছেন বিপন্ন মানবতার ছবি। আধুনিক নগরজীবনের অবক্ষয়, হতাশা, নিঃসঙ্গতা, সংশয়বোধ উদ্ভাসিত তাঁর লেখনি সত্তায়। ঘুরেফিরে এসেছে পরাবাস্তবতা। 

তাঁর ভাবনার জগৎ জীবনের চেয়ে অধিকতর। বাংলার রূপ দেখে পৃথিবীর ঐশ্বর্য খোঁজার ইচ্ছে জাগেনি তাই।

কবির মা কুসুম কুমারি দেবী হয়তো পুত্রের মধ্যে তাঁর স্বপ্ন জাগরণের আলো দেখেছিলেন। তাই তো লিখেছিলেন ‘আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’

এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর।
২২ অক্টোবর কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় চিরন্তন এ কবির। নিজের লেখা কবিতার মতোই হারিয়ে গেছেন। কিন্তু বেঁচে আছেন অনবদ্য কবিতায়। 

“নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়”… 

কবির ৬৮ তম প্রয়াণ দিবসে তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।

Do you like আখিরুল ইল্লিন's articles? Follow on social!
কোন মন্তব্য নেই
মন্তব্য করুন Cancel
Comments to: কবি জীবনানন্দ দাশের ৬৮ তম প্রয়াণ দিবস আজ

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.